কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামি গান - আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ ২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চরুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। মাত্র আট বছরের বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। এ সময় তিনি জীবিকার প্রয়োজনে লেটো’র দলে যোগ দেন কিন্তু বেশিদিন তিনি এ দলের থাকেননি। দশ বছর বয়সে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর তিনি গ্রামের মক্তবে শিক্ষাকতরা চাকরির নেন। তারপর তিনি চলে এলেন আসানসোল শহরে রুটির দোকানে। আসানসোল থানার দারোগা জনাব রফিজ উদ্দিনের সাথে পরিচয় হয় এবং চলে এলেন দারোগান নিজ গ্রাম ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরামপুর গ্রামে। তাকে ভূর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। এখানে প্রায় এক বছর পড়ালেখার পর নজরুল আবার চলেন এলেন চরুলিয়ার রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে। এখানে তিনি পড়ালেখা করলেন তিন বছর। এ সময় প্রথম মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো। নজরুল তখন প্রবেশিকা পরীক্ষা দেবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হতেই তিনি যুুদ্ধে যোগ দিলেন। ১৯১৭ সালে চাকরি নিলেন ৪৯ নং বাঙ্গালি পল্টনে। তিন বছর এই চাকরি করেছেন। চাকরির অল্প সময়ে তিনি প্রথমে হাবিলদার ও পরে ব্যাটেলিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পদে উন্নীত হন। ১৯২০ সালে বাঙালি পল্টন ভেঙ্গে দেওয়া হলে তার পেশাদারী সৈনিক জীবন সমাপ্ত হয়। সৈনিক থাকাকালিন ১৯১৯ সালে তাঁর প্রথম গল্প “বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী” কলকাতার সওগাত পত্রিকায় জৈষ্ঠ্য ১৩২৬ সংখ্যায় এবং প্রথম কবিতা “মুক্তি” কলকাতার বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকায় শ্রাবন ১৩২৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এরপর নজরুল চলে এলেন কলকাতায়। নিজেকে পরিপূর্নভাবে সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত করলেন। ১৯২২ সালে বিজলী ও মোসলেম ভারত পত্রিকায় তাঁর বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী” প্রকাশিত হতেই বিদ্রোহী কবির খ্যাতি লাভ করে ফেলেন। নজরুল সম্পাদিত অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা “ধূমকেতু” প্রকাশিত হবার পর পরই ইংরেজ সরকার তাকে গ্রেফতার করেন। জেল থেকে বের হয়ে সাহিত্য চর্চায় নতুন করে আত্মনিয়োগ করেন এবং একে একে কাব্য-গ্রন্থাবলী অগ্নি-বীনা, বিষের বাঁশী, সাম্যবাদী, সর্বহারা,প্রলয়-শিখা ইত্যাদি প্রকাশিত করেন। রচনা করতে থাকেন বিভিন্ন বিষয়ে গান। কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবন মাত্র বাইশ বছরের। অল্প সময়ে রচনা করেছেন গান কবিতা উপন্যাস ছোট গল্প অুনবাদ সাহিত্য গীতি নাট্য অভিনয় সুর সাংবাদিকতা প্রাবন্ধিক। যখন তাঁর বয়স ৪১-৪২ বছর এক দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হোন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার ১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর উদ্যোগে বাংলাদেশের জাতীয় কবি সম্মান দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কবি নজরুল প্রায় পঁচিশ বছর অসুস্থ ছিলেন বাংলা ১২ ভাদ্র ১৩৮৩/ ২৭ আগস্ট ১৯৭৬ মৃত্যুবরণ করেন। জাতীয় কবিকে পূর্নাঙ্গ রাস্ট্রিয় মর্যদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
নজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত গান। তাঁর সীমিত কর্মজীবনে তিনি ৩,০০০-এরও বেশি গান রচনা করেছেন। পৃথিবীর কোনো ভাষায় একক হাতে এত বেশি সংখ্যক গান রচনার উদাহরণ নেই। এসকল গানের বড় একটি অংশ তাঁরই সুরারোপিত। তাঁর রচিত চল্ চল্ চল্, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল বাংলাদেশের রণসংগীত। তাঁর কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুল বাগিচা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আরো গান সংগ্রন্থিত হয়েছে। তবে তিনি প্রায়শ তাৎক্ষণিকভাবে লিখতেন; একারণে অনুমান করা হয় প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে।
শ্রেণীবিন্যাস: সকল নজরুলগীতি ১০টি ভাগে বিভাজ্য।
ভক্তিমূলক গান,
প্রণয়গীতি,
প্রকৃতি বন্দনা,
দেশাত্মবোধক গান,
রাগপ্রধান গান,
হাসির গান,
ব্যাঙ্গাত্মক গান,
সমবেত সঙ্গীত,
রণ সঙ্গীত,
বিদেশীসুরাশ্রিত গান।
নজরুলগীতির বিষয় ও সুরগত বৈচিত্র্য বর্ণনা করতে গিয়ে নজরুল-বিশেষজ্ঞ আবদুল আজীজ আল্-আমান লিখেছেন, “গানগুলি এক গোত্রের নয়, বিভিন্ন শ্রেণীর। তিনি একাধারে রচনা করেছেন গজল গান, কাব্য সংগীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সংগীত, খেয়াল, রাগপ্রধান, হাসির গান, কোরাস গান, দেশাত্মবোধক গান, গণসংগীত–শ্রমিক-কৃষকের গান, ধীবরের গান, ছাদপেটার গান, তরুণ বা ছাত্রদলের গান, মার্চ-সংগীত বা কুচকাওয়াজের গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, নারী জাগরণের গান, মুসলিম জাতির জাগরণের গান, শ্যামাসংগীত, কীর্তন, বৈষ্ণবপদাবলী, অন্যান্য ভক্তিগীতি, ইসলামী সংগীত, শিশু সংগীত, নৃত্য-সংগীত, লোকগীতি – ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, সাম্পানের গান, ঝুমুর, সাঁওতালী, লাউনী, কাজরী, বাউল, মুর্শেদী এবং আরও নানা বর্ণের গান। বিভিন্ন বিদেশী সুরের আদলে রচিত গানের সংখ্যাও কম নয়। এ ছাড়া লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় রাগ-রাগিণীকে অবলম্বন করে ‘হারামণি’ পর্যায়ের গান এবং নতুন সৃষ্ট রাগ-রাগিণীর উপর ভিত্তি করে লেখা ‘নবরাগ’ পর্যায়ের গানগুলি নজরুলের সাংগীতিক প্রতিভার অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে। কাজী নজরুলের ইসলামি গান-
(১)
রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
শিল্পী- আব্বাস উদ্দিন
প্রথম রেকর্ড- ১৯৩২
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
ঢাল হৃদয়ের তশতরীতে শিরনি তৌহিদের,
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হজরত হয় মনে উম্মীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
তোরে মারল’ ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
(২)
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধর হাত মম
শিল্পী- ডা. অঞ্জলি মুখার্জি
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধর হাত মম।
জ্বলওয়া দেখালে দীল হরিলে শুধু হলে বেগানা;
হেসে হেসে সংসার কহে–দীওয়ানা এ দীওয়ানা॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।।
দুখের দোসর কেউ নাহি মোর নাই ব্যথিত ব্যথার,
তোমায় ভুলে ভাসি অকূলে, পার করো সরকার॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।।
বিরহের রাত একেলা কেঁদে হলো ভোর;
হৃদয়ে মোর শান্তি নাই, কাঁদে পরাণ মোর॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।
(৩)
আমার প্রিয় হযরত নবী কামলিওয়ালা
শিল্পী- ইয়াকুব আলী খান
আমার প্রিয় হযরত নবী কামলিওয়ালা!
যাঁহার রওশনীতে দ্বীন- দুনিয়া উজালা।।
যাঁরে খুঁজে ফেরে কোটি গ্রহ তারা,
ঈদের চাঁদে যাঁহার নামের ইশারা;
বাগিচায় গোলাব গুল গাঁথে যাঁর মালা।।
আউলিয়া আম্বিয়া দরবেশ যাঁর নাম
খোদার নামের পরে জপে অবিরাম,
কেয়ামতে যাঁর হাতে কাওসার পিয়ালা।।
পাপে মগ্ন ধরা যাঁর ফজিলতে
ভাসিল সুমধুর তৌহিদ- স্রোতে,
মহিমা যাঁহার জানেন একে আল্লাহতায়ালা।।
(৪)
আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান, কোথা সে মুসলমান
শিল্পী- ইয়াকুব আলী খান
আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান, কোথা সে মুসলমান।
কোথা সে আরিফ, অভেদ যাহার জীবন-মৃত্যু-জ্ঞান।।
যাঁর মুখে শুনি তওহিদের কালাম
ভয়ে মৃত্যুও করিত সালাম।
যাঁর দ্বীন দ্বীন রবে কাঁপিত দুনিয়া জ্বীন-পরী ইনসান।।
স্ত্রী-পুত্ররে আল্লারে সপি জেহাদে যে নির্ভীক
হেসে কোরবানী দিত প্রাণ হায়! আজ তারা মাগে ভিখ।
কোথা সে শিক্ষা–আল্লাহ ছাড়া
ত্রিভুবনে ভয় করিত না যারা।
আজাদ করিতে এসেছিল যারা সাথে ল’য়ে কোরআন।।
(৫)
আল্লাজী আল্লাজী রহম করো তুমি যে রহমান
শিল্পী- ইয়াকুব আলী খান
আল্লাজী আল্লাজী রহম কর তুমি যে রহমান
দুনিয়াদারির ফাঁদে পড়ে কাঁদে আমার প্রাণ।।
পাই না সময় ডাকতে তোমায়
বৃথা কাজে দিন বয়ে যায়
চলতে নারি
মেনে আমার নবীর ফরমান।।
দুনিয়াদারির চিন্তা এসে মনকে ভোলায় সদা
তাইতো মনে তোমায় স্মরণ করতে নারি খোদা।
দাও অবসর তুমি ডাকার
এই বেদনা সহে না আর
সংসারে এই দোজখ হতে করো মোরে ত্রাণ।।
(৬)
দে জাকাত দে জাকাত তোরা দেরে জাকাত
শিল্পী- জোসেফ কমল রড্রিক্স
দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দেরে জাকাত।
তোর দীল খুলবে পরে, ওরে আগে খুলুক হাত।।
দেখ পাক কোরান, শোন নবীজীর ফরমান–
ভোগের তরে আসেনিরে দুনিয়ায় মুসলমান
তোর একার তরে দেননি খোদা দৌলতের খেলাত।।
তোর দরদালানে কাঁদে ভুখা হাজারো মুসলিম,
আছে দৌলতে তোর তাদেরও ভাগ–বলেছেন রহিম,
বলেছেন রহমানুর রহিম, বলেছেন রসূলে করীম,
সঞ্চয় তোর সফল হবে, পাবিরে নাজাত।।
এই দৌলত বিভব -রতন যাবে না তোর সাথে,
হয়তো চেরাগ জ্বলবে না তোর গোরে শবে-রাতে ;
এই জাকাতের বদলাতে পাবি বেহেশ্তি সওগাত।
(৭)
তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
শিল্পী- ইয়াকুব আলী খান
তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে।।
কূল মখ্লুকে আজি ধ্বনি ওঠে, কে এলো ঐ
কলেমা শাহাদাতের্ বাণী ঠোঁটে, কে এলা ঐ
খোদার জ্যোতি পেশানিতে ফোটে, কে এলো ঐ
আকাশ-গ্রহ-তারা পড়ে লুটে, কে এলা ঐ
পড়ে দরুদ ফেরেশ্তা, বেহেশ্তে সব দুয়ার খোলে।।
মানুষে মানুষের অধিকার দিল যে-জন
‘এক আল্লাহ্ ছাড়া প্রভু নাই’ কহিল যে-জন,
মানুষের লাগি’ চির-দীন্ বেশ ধরিল যে-জন
বাদশা ফকিরে এক শামিল করিল যে-জন
এলো ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবী
ব্যথিত-মানবের ধ্যানের ছবি
আজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল্ মুক্তি-কলোরোলে।।
মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে।।
কূল মখ্লুকে আজি ধ্বনি ওঠে, কে এলো ঐ
কলেমা শাহাদাতের্ বাণী ঠোঁটে, কে এলা ঐ
খোদার জ্যোতি পেশানিতে ফোটে, কে এলো ঐ
আকাশ-গ্রহ-তারা পড়ে লুটে, কে এলা ঐ
পড়ে দরুদ ফেরেশ্তা, বেহেশ্তে সব দুয়ার খোলে।।
মানুষে মানুষের অধিকার দিল যে-জন
‘এক আল্লাহ্ ছাড়া প্রভু নাই’ কহিল যে-জন,
মানুষের লাগি’ চির-দীন্ বেশ ধরিল যে-জন
বাদশা ফকিরে এক শামিল করিল যে-জন
এলো ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবী
ব্যথিত-মানবের ধ্যানের ছবি
আজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল্ মুক্তি-কলোরোলে।।
(৮)
আমি যদি আর হতাম
শিল্পী- ইয়াকুব আলী খান
এই পথে মোর চ’লে যেতেন নূর নবী হজরত।।
পয়জার তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে,
আমি ঝর্না হয়ে গ’লে যেতাম অম্নি পরম সুখে;
সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ্-ই-তুরে,
দিবা নিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত।।
মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি ল’য়ে
আমি পড়তাম তাঁর পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে।
হাসান হোসেন হেসে হেসে নাচতো আমার বক্ষে এসে
চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নেয়ামত।।
(৯)
জরীন হরফে লেখা নিল আসমানের কোরআন
শিল্পী- খায়রুল আনাম শাকিল
রূপালি হরফে লেখা
(নীল)আসমানের কোরআন।
সেথা তারায় তারায় খোদার কালাম
(তোরা) পড়, রে মুসলমান
নীল আসমানের কোরআন।।
সেথা ঈদের চাঁদে লেখা
মোহাম্মদের ‘মীম’-এর রেখা,
সুরুযেরই বাতি জ্বেলে’ পড়ে রেজোয়ান।।
খোদার আরশ লুকিয়ে আছে ঐ কোরআনের মাঝে,
খোঁজে ফকির-দরবেশ সেই আরশ সকাল-সাঁঝে।
খোদার দিদার চাস রে, যদি
পড় এ কোরআন নিরবধি;
খোদার নুরের রওশনীতে রাঙ রে দেহ-প্রাণ।।
(১০)
আল্লার নাম মুখে যাহার বুকে আল্লার নাম শিল্পী-
এই দুনিয়াতেই পেয়েছে সে বেহেশ্তের আরাম।।
সে সংসারকে ভয় করে না নাই মৃত্যুর ডর
দুনিয়াকে শোনায় শুধু আনন্দেরি খবর
দিবানিশি পান করে সে কওসরেরি জাম —
পান করে কওসরেরি জাম।।
(১১ )
আসিছেন হাবিব-এ খোদাশিল্পী-
চাঁদ পিয়াসে ছুটে আসে আকাশ পানে যেমন চকোর।
কোকিল যেমন গেয়ে ওঠে ফাগুন আসার আভাস পেয়ে,
তেমনি ক’রে হরষিত ফেরেশ্তা সব উঠলো গেয়ে:
দেখ আজ আরশে আসেন মোদের নবী কম্লিওয়ালা।
হের সেই খুশিতে চাঁদ-সুরুজ আজ হ’ল দ্বিগুণ আলা।।
ফকির দরবেশ্আউলিয়া যাঁরে, ধ্যানে জ্ঞানে ধ’রতে নারে,
যাঁর মহিমা বুঝিতে পারে এক সে আল্লাহ তালা।।
বারেক মুখে নিলে যাঁহার নাম, চিরতরে হয় দোজখ্হারাম,
পাপীর তরে দস্তে যাঁহার কওসরের পিয়ালা।।
‘মিম্’ হরফ না থাকলে সে আহাদ, নামে মাখা তার শিরিন শাহাদ্,
নিখিল প্রেমাষ্পদ আমার মোহাম্মদ ত্রিভুবন উজালা।।
(১২ )
আমি গরবিনী মুসলিম বালাশিল্পী-
আমি গরবিনী মুসলিম বালা
সংসার সাহারাতে আমি গুলে লালা।।জ্বালায়েছি বাতি (আমি) আঁধার কাবায়
এনেছি খুশির, ঈদে শিরনির থালা।।
আনিয়াছি ঈমান প্রথম আমি
আমি দিয়াছি সবার আগে মোহাম্মদে মালা।।
কত শত কারবালা বদরের রণে
বিলায়ে দিয়াছি স্বামী-পুত্র স্বজনে;
জানে গ্রহ-তারা জানে আল্লাহ তালা।।
(১৩ )
আল্লাহকে যে পাইতে চায় হযরতকে ভালোবেসেশিল্পী-
আল্লাকে যে পাইতে চায় হজরতকে ভালবেসে।
আরশ্ কুরসি লওহ কালাম, না চাহিতেই পেয়েছে সে।।
রসুল নামের রশি ধ’রে যেতে হবে খোদার ঘরে,
নদী-তরঙ্গে যে পড়েছে ভাই, দরিয়াতে সে আপনি মেশে।।
তর্ক ক’রে দুঃখ ছাড়া কি পেয়েছিস্ অবিশ্বাসী,
কি পাওয়া যায় দেখ্ না বারেক হজরতে মোর ভালবাসি’।
এই দুনিয়ায় দিবা-রাতি ঈদ্ হবে তোর নিত্য সাথী,
তুই যা চাস্ তাই পাবি রে ভাই আহমদ চান যদি হেসে।।
(১৪ )
আল্লাহর নাম জপিও ভাই দিবসে ও রাতেশিল্পী-
সকল কাজের মাঝে রে ভাই তাঁহার রহম পেতে
আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ্, আল্লাহ্ ।।
হাত করবে কাজ রে ভাই মন জপবে নাম
ঐ নাম জপতে লাগে না ভাই টাকা কড়ি দাম,
নাম জপো ভাই মাঠে ঘাটে হাটের পথে যেতে।
আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ্, আল্লাহ্ ।।
ঐ আল্লার নাম যদি রে ভাই তুমি থাকো ধ’রে
ঐ নামও তোমায় থাকবে ধ’রে দুঃখ বিপদ ঝড়ে,
ঐ নামেরে সঙ্গী করো নাইতে শুতে খেতে।
আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ্, আল্লাহ্ ।।
তোমার দেহ মন হবে রে ভাই নূরেতে রওশন
মাতোয়ারা হও যিকির করো খোদার প্রেমে মেতে।
কোরাস: আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ্, আল্লাহ্ ।।
আল্লা নামের শিরনি তোরা কে নিবি কে আয়।
মোরা শিরনি নিয়ে পথে হাঁকি (নিতে) কেহ নাহি চায়।।
এই শিরনির গুণে ওরে শোন
শিরিণ্ হবে তোর তিক্ত মন রে
রাঙা হবে ভাঙা হৃদয় এই শিরনির মহিমায়।।
ধররে প্রাণের তশ্তরি তোর আরশ পানে মেলে,
খোদার খিদে মিটবে রে ভাই এই শিরনি খেলে।
তোদের পেট পুরিলি ধূলামাটি খেয়ে
করলি হেলা আল্লার নাম পেয়ে
তোরা কাবা পাবার দরজা পাবি আয় আল্লা নামের দরজায়।।
ঐ নামও তোমায় থাকবে ধ’রে দুঃখ বিপদ ঝড়ে,
ঐ নামেরে সঙ্গী করো নাইতে শুতে খেতে।
আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ্, আল্লাহ্ ।।
তোমার দেহ মন হবে রে ভাই নূরেতে রওশন
মাতোয়ারা হও যিকির করো খোদার প্রেমে মেতে।
কোরাস: আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ্, আল্লাহ্ ।।
(১৫ )
আল্লাহজী গো আমি বুঝিনা রে তোমার খেলাশিল্পী-
আল্লাজী গো, আমি বুঝি না রে তোমার খেলা।
তাই দুঃখ পেলে ভাবি — বুঝি হানিলে হেলা।।
কুমার যখন হাঁড়ি গড়ে, কাঁদে মাটি —
ভাবে, কেন পোড়ায় আমায় চড়িয়ে ভাটি;
ফুলদানি হয় পোড় খেয়ে সেই মাটির ঢেলা।।
মা শিশুরে ধোয়ায় মোছায়, শিশু ভাবে —
ছাড়া পেলে, মা ফেলে সে পালিয়ে যাবে।
মোরা, দোষ করে তাই দুষি তোমায় সারা বেলা।।
আমরা তোমার বান্দা, খোদা তুমি জানো —
কেন হাসাও, কেন কাঁদাও, আঘাত হানো।
যে গড়তে জানে তাঁরই সাজে ভেঙে ফেলা।।
আল্লাজী গো, আমি বুঝি না রে তোমার খেলা।
তাই দুঃখ পেলে ভাবি — বুঝি হানিলে হেলা।।
কুমার যখন হাঁড়ি গড়ে, কাঁদে মাটি —
ভাবে, কেন পোড়ায় আমায় চড়িয়ে ভাটি;
ফুলদানি হয় পোড় খেয়ে সেই মাটির ঢেলা।।
মা শিশুরে ধোয়ায় মোছায়, শিশু ভাবে —
ছাড়া পেলে, মা ফেলে সে পালিয়ে যাবে।
মোরা, দোষ করে তাই দুষি তোমায় সারা বেলা।।
আমরা তোমার বান্দা, খোদা তুমি জানো —
কেন হাসাও, কেন কাঁদাও, আঘাত হানো।
যে গড়তে জানে তাঁরই সাজে ভেঙে ফেলা।।
(১৬ )
আল্লা নামে শিরনি তোরা কে নিবি কে আয়শিল্পী-
মোরা শিরনি নিয়ে পথে হাঁকি (নিতে) কেহ নাহি চায়।।
এই শিরনির গুণে ওরে শোন
শিরিণ্ হবে তোর তিক্ত মন রে
রাঙা হবে ভাঙা হৃদয় এই শিরনির মহিমায়।।
ধররে প্রাণের তশ্তরি তোর আরশ পানে মেলে,
খোদার খিদে মিটবে রে ভাই এই শিরনি খেলে।
তোদের পেট পুরিলি ধূলামাটি খেয়ে
করলি হেলা আল্লার নাম পেয়ে
তোরা কাবা পাবার দরজা পাবি আয় আল্লা নামের দরজায়।।
(১৭ )
আমার হৃদয় সামাদানে জ্বলি মোমের বাতি শিল্পী-
নবীজী গো! জেগে’ আমি কাঁদি সারা রাতি।।
আস্মানেরই চাঁদোয়া-তলে
চাঁদ-সেতারার পিদিম জ্বলে,
ওরাও যেন খোঁজে তোমায় আমার দুঃখের সাথি।।
দিনের কাজে পাই না সময় যাই নিরালা রাতে,
তোমায় পাওয়ার পথ খুঁজি গো কোরানের আয়াতে।
তোমায় পেলে পাব খোদায়
তাই শরণ যাচি তোমারি পায়,
পাওয়ার আশে জেগে থাকি প্রেমের শয্যা পাতি’।।
ঝর্লে পাতা, ডাক্লে পাখি,
চম্কে ভাবি, তুমি নাকি?
মস্জিদে যাই গভীর রাতে খুঁজি আঁতিপাঁতি।।
রোজ-হাশরে দেখা পাব মোরে সবাই বলে;
তোমার বিহনে আমার ঘুম নাই নয়নে,
মোর জীবনে রোজ-কিয়ামত আসে প্রতি পলে।
বিষের সমান লাগে আমার দুনিয়ার যশ-খ্যাতি।।
(১৮ )
ইয়া আল্লাহ তুমি রক্ষা কর দুনিয়া ও দ্বীন শিল্পী-
শান-শওকতে হোক পূর্ণ আবার নিখিল মুসলেমিন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।
(খোদা) মুষ্টিমেয় আরববাসী যে ঈমানের জোরে
তোমার নামের ডঙ্কা বাজিয়েছিল দুনিয়াকে জয় ক’রে
(খোদা) দাও সে ঈমান, সেই তরক্কী, দাও সে একিন।
খোদা দাও সে একিন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।
হায়! যে-জাতির খলিফা ওমর শাহানশাহ হয়ে
ছেঁড়া কাপড় প’রে গেলেন উপবাসী র’য়ে
আবার মোদের সেই ত্যাগ দাও, খোদা
ভোগ-বিলাসে মোদের জীবন ক’রো না মলিন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।
(খোদা) তুমি ছাড়া বিশ্বে কারো করতাম না ভয়
তাই বিশ্বে হয়নি মোদের কভু পরাজয়
দাও সেই দিক্ষা শক্তি সেই ভক্তি দ্বিধাহীন।
আমিন আল্লাহুম্মা আমিন।।
(১৯ )
ইয়া মোহাম্মদ বেহেশত হতে খোদায় পাওয়ার পথ দেখাওশিল্পী-
এই দুনিয়ার দুঃখ থেকে এবার আমায় নাজাত দাও।।
পীর মুর্শীদ পাইনি আমি, তাই তোমায় ডাকি দিবস-যামী,
তোমারই নাম হউক হজরত আমার পরপারের নাও।।
অর্থ-বিভব-যশ-সম্মান চেয়ে চেয়ে নিশিদিন
দুঃখে শোকে জ্ব’লে মরি পরান কাঁদে শ্রান্তিহীন।
আল্লা ছাড়া ত্রিভুবনে, শান্তি পাওয়া যায় না মনে
কোথায় পাব সে আবহায়াত ইয়া নবীজী রাহ্ বাতাও।।
(২০ )
ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগরশিল্পী-
বদনসীব আয়, আয় গুনাহগার নূতন করে সওদা কর।।
জীবন ভ'রে করলি লোকসান আজ হিসাব তার খতিয়ে নে;
বিনিমূলে দেয় বিলিয়ে সে যে বেহেশতী নজর।।
কোরানের ঐ জাহাজ বোঝাই হীরা মুক্তা পান্নাতে,
লুটে নে রে, লুটে নে সব, ভরে তোল তোর শূন্য ঘর।
কেয়ামতের বাজারে ভাই মুনাফা যে চাও বহুৎ —
এই ব্যাপারীর হও খরিদ্দার লও রে ইহার সিল-মোহর।।
আরশ হতে পথ ভুলে এ এলো মদিনা শহর,
নামে মোবারক মোহাম্মদ — পুঁজি 'আল্লাহু আকবর'।।
(২১ )
পুবান হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়াশিল্পী- বেদার উদ্দিন আহমেদ
যাও রে বইয়া এই গরিবের সালামখানি লইয়া
কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই
সারা জনম সাধ ছিল যে মদিনাতে যাই (রে ভাই)
মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া
(তোমার) পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি
লইয়া যাও রে এই নিরাশের, দীর্ঘ নিশাসখানি।
নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া
মা ফাতেমা হজরত আলীর মাজার যথায় আছে
আমার সালাম দিয়া আইস তাদের পায়ের কাছে (রে ভাই!)
কাবায় মোনাজাত করিও আমার কথা কইয়া॥
---- বাউল পানকৌড়ি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন