লালন সাধক আব্দুর রব ফকির - লালনের গানের অপর নাম হলো জ্ঞান
সাধু গুরু আবদুর রব ফকির
১৯৫৫ সালের ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার মিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবার নাম সিরাজ জোয়ার্দার। মা ছিলেন ওই গ্রামের বিখ্যাত ধাত্রী। ছোট বেলাতেই তাঁর বাবা সাইকেলের পিছনে বসিয়ে লালনের আখড়ায় নিয়ে যেতেন সাথে। বাবার সাথে লালন আখড়ায় আসা যাওয়াতে এক গুরু সাথে খুব ভাল ভাব পরিচয় হয়ে যায়। গুরুর নাম ছিলো আব্দুর রহিম বয়াতি। তাঁর কাছেই লালনের গান ও দোতারা বাজানোর প্রাথমিক দিক্ষা নিতে থাকেন। শৈশব কৈশরে ভালবেসে ফেলেন লালন গান এবং দোতারাকে। বাবা সিরাজ জোয়ার্দার কাজ করতেন কুষ্টিয়া সুগার মিলে। পরবতীর্তে পিতার কর্মস্থল ছেলেকে কাজ করার সুযোগ করে দেন । কাজে যোগ দিয়ে পেয়ে যান আরেক গুরুকে। তাঁর নামও ছিল রব ফকির। নতুন গুরু যেনোতেনো কেউ ছিলেন না, তিনি ছিলেন লালন সাধক ও গুরুদের মধ্যে কিংবদন্তিতুল্য আবদুর রব শাহ ওরফে লবান শাহ (১৯২২-২০০৯)। তাঁর কাছে নতুন ভাবে দিক্ষা নেওয়া শুরু করেন। গুরু শিস্যের নাম একই হওয়াতে গুরু লবান শাহ শিস্যের নতুন নাম রাখেন গোপাল শাহ্। পরবর্তীতে আব্দুর রব ফকির নামেই পরিচিত করেন নিজেকে। নিজেকে নিয়ে যান লালন সাধক ও লালন গানের প্রচারকদের মধ্যে সম্মানের স্থানে। লালনের গান ও বানী প্রচার করেন দেশ বিদেশ বিভিন্ন শহরে। বর্তমান সময়ে অনেকেই আছেন যাদের লালন গানের দিক্ষা গুরু ছিলেন আব্দুর রব ফকির- আনুশেহ আনাদিল, শাহানাজ বেলী, শাহানা বাজপেয়ী, অর্ণব, সাহাবুল বাউল, অনেককেই হাতে কলমে গান শিখিয়েছিলেন তিনি। বাংলা ব্যান্ডের দ্বিতীয় এ্যালবাম ‘প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব’ গান করেছিলেন। তারপর একতারা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম সিডি ‘শব্দের ঘরে’। শ্রোতা মহলে খুবই প্রসংশিত এবং জনপ্রিয়তা পায় এ্যালবাম দুটি।
নিজ হাতে তৈরি করতেন দোতারা। তাঁর কথা আমার দেহটাই দোতারা, লালনের গানই আমার ধর্ম। চোখ চোখ বুজলেই দোতারার সুর শুনতে পাই। দোতারার সুরের সঙ্গে দেহের সুর মিশে গেছে। যত দিন বাঁচব, দোতারার সুর বাজিয়েই বাঁচব। লালন ফকির সর্ম্পকে বলতেন- লালনের গানের অপর নাম হলো জ্ঞান, এই জ্ঞান হলে ভাব হয় আর ভাব হলে অনেক কিছু লাভ হয়। আরো বলতেন লালন শাহ সবসময় কর্মকে ভালবেসেছেন। কর্মহীন জীবনে কোন ভজন সাধন নাই। কর্ম ছাড়া জীবন ছন্নছাড়া। ধর্মের একটা অংশ হচ্ছে কর্ম। কর্ম শেষে অবসর সময়ে যতটুকু সাধনা করা যাবে সেই সময়টুকুই সাধনার কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট প্রকৃতি দেখে যেন আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে না যাই। সাঁইজি বলেছেন- জগৎ মুক্তিতে ভুলালেন সাঁই। ভক্তি দাও হে যাতে চরণ পাই। সঙ্গগুণে মানুষের চরিত্র নির্ধারণ হয়। যে যেইরকম সঙ্গ ধরে তার রঙ সেইরকমই হয়। যদি কেউ সাধুর কাছে যায় তাহলে সে সাধু হয়, যদি কেউ চোরের কাছে যায় তাহলে সে চোর হয়। এজন্য আমাদের মুরুব্বিরা বলে থাকেন, বাবা সকল যাই করিস মাঝেমাঝে একটু সৎসঙ্গ করিস। সৎসঙ্গ বলতে সৎ-কথা আলোচনা করাকে বোঝানো হয়েছে, কিন্তু এ সৎ-কথা সব মানুষের মুখে আসে না। কিছু কিছু মুখ দিয়ে সৎ কথা আসে, সেই মানুষগুলোর কাছে মাঝে মাঝে যেতে হবে। তার জন্য যদি দশ মাইল গাড়িতে করে ভ্রমণ করতে হয় তবু যেতে হবে। সেইজন্য সব মানুষেরই একজন সৎ গুরুর দরকার, যেমন লালনের গুরু ছিলেন সিরাজ সাঁই। তাই লালন সাঁই বলেছেন, “ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার সর্বসাধন সিদ্ধি হয় তার। মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি-মানুষের মাথায় লাঠি মেরে কিছু হবে না। মানুষকে ভালবেসেই সবকিছু করতে হবে। এজন্য একজন মানুষগুরু দরকার। জীবনে একজন শিক্ষাগুরু থাকা প্রয়োজন। এ মানুষগুলোই প্রকৃত বাউল সাধক যারা শুধু নিজেদের কল্যাণের জন্য চিন্তা না করে সমগ্র মানবজাতির কথা চিন্তা করে যাচ্ছেন।
২০১৬ সালের ৭ আগস্ট, বাংলা ২৩ শে শ্রাবণ ১৪২৩, মধ্যরাতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগে এই লালন সাধক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সাধক রব ফকিরের কন্ঠে অমৃত লালন বানী
১. নবী দিনের রাসুল খোদারও মশগুল---
নবী দিনের রাসুল খোদার মশগুল
ভুল করিলে মরবি প্রাণে হারাবি দুই কুল।
নবী আউলে আল্লার নূর
দুওমেতে তওবার ফুল
ছিয়মেতে ময়নার গলার হার;
চৌঠমেতে নূর ছিতারা
পঞ্চমে ময়ূর।
নবী পাঞ্জা ওয়াক্ত নামাজ পড়ে
সেজদা দেয় সে গাছের পরে
সেই না গাছের ঝরে পড়ে ফুল;
সেই ফুলেতে মৈথুন করে
দুনিয়া করলেন স্থুল।
আহাদে আহাম্মদ বর্ত
জেনে কর তাহার অর্থ
হয় না যেন ভুল;
লালন বলে ভেদ না জেনে
হলাম নামাকুল।
২. জ্ঞান চক্ষুতে সে রূপ চিনিতে লালন---
অহর্নিশি মায়ার ঠুসি জ্ঞান চক্ষুতে
সে রূপ চিনিতে
সাধ্য কিরে আমার সে রূপ চিনিতে।
আমি আর অচিন একজন
এক জায়গাতে থাকি দুজন
ফাঁকে ফেরে লক্ষ্য যোজন
না পাই দেখিতে।
ঈশানকোণে হামেশ ঘড়ি
সে নড়ে কি আমি নড়ি
আমার আমি হাতড়ে ফেরে
না পাই ধরিতে।
ঢুঁড়ে হদ্দ মেনে আছি
এখন বসে খেদাই মাছি
লালন বলে মরে বাঁচি
কোন কার্যতে।
৩. সেকি সামান্য চোরা ধরবি কোনা কাঞ্চিতে ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফান্দ পেতে----
সে কি সামান্য চোর ধরবি কোনা-কাঞ্চিতে
ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফান্দ পেতে।
পাতালে চোরের নহর
দেখায় আসমানের উপর
তিন তারে হচ্ছে খবর
শুভ শুভা যোগমতে।
কোথা ঘর কি বাসনা
কে করে ঠিক ঠিকানা
হাওয়ায় তার লেনাদেনা
হাওয়ায় মূলধারা তাতে।
চোর ধরে রাখবি যদি
হৃদ-গারদ কর গে খাঁটি
লালন কয় খুঁটি-নাটি
থাকতে কি চোর দেয় ছুঁতে।
৪. শুনি নবি অঙ্গে জগৎ পয়দা হয়--
৭. খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়--
৮. মানুষ মানুষ সবাই বলে আছে কোন মানুষের বসত কোন দলে--
৯. নিজের মনকে করলাম সোজা বিবির মনে গোল রইলো নামাজ আদায় কই হইলো---
১০. গেড়ে গাঙ্গেরে ক্ষ্যাপা হাপুর হুপুর ডুব পাড়িলে---
সেই যে আকার কী হল তার কে করে নির্ণয়
শুনি নবির অঙ্গে জগৎ পয়দা হয়।
আব্দুল্লার ঘরেতে বলো সেই নবির জন্ম হলো
মূল দেহ তার কোথায় ছিলো কারে শুধায়।
কী রূপে নবির জন্ম যুক্ত হন
আবহায়াত তার নাম লিখেছে
হাওয়া নাই সেথায়
শুনি নবির অঙ্গে জগৎ পয়দা হয়।
একজনে দুই কায়া ধরে
কেউ পাপ কেউ পুণ্যি করে
কী হবে তার রোজ হাসরে নিকাশের বেলায়
শুনি নবির অঙ্গে জগৎ পয়দা হয়।
নবির ভেদ পেলে এক ক্রান্তি
ঘুচে যেত মনের ভ্রান্তি
দৃষ্টি হত আলেকপান্তি
লালন ফকির কয়।
৫. এমন মানব জনম আর কি হবে মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে---
এমন মানব জনম আর কি হবে
মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে।
অনন্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই
শুনি মানবের উত্তম কিছুই নাই
দেব দেবতাগণ করে আরাধন
জন্ম নিতে মানবে।
কত ভাগ্যের ফলে না জানি
পেয়েছ এই মানব তরণী
বেয়ে যাও ত্বরায় তরী
সুধারায় যেন ভরা না ডোবে।
এই মানুষে হবে মাধুর্য্য ভজন
তাইতে মানবরূপ গঠলেন নিরঞ্জন
এবার ছুটে গেলে আর না দেখি কিনার
লালন কয় কাতর ভাবে।
৬. শব্দের ঘরে নি:শব্দ করে সদাই তারা আছে জুড়ে ---
শব্দের ঘরে নি:শব্দ করে
সদাই তারা আছে জুড়ে,
দিয়ে জীবের নজরে ঘোর টাটি
পরের হাতে কল-কাঠি
খুঁজে ধর পাই কি আমি
শতেক তলা মাল কুঠুরি।
আপন ঘরে পরের কারবার
আমি চিনলামনারে তার বাড়ি ঘর
আমি বেহুশ মুটে,কারো মুঠ খাটি
পরের হাতে কল-কাঠি
খুঁজে ধর পাই কি আমি
শতেক তলা মাল কুঠুরি।
থাকতে রতন ঘরে
একি বেহাত আজ আমারে
ফকির লালন বলে
মিছে ঘর-বাটি
পরের হাতে কল-কাঠি
খুঁজে ধর পাই কি আমি
শতেক তলা মাল কুঠুরি।
৭. খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়--
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়।
তারে ধরতে পারলে
মনবেড়ি দিতাম পাখির পায়।
আট কুঠুরী নয় দরজা আঁটা
মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাঁটা
তার উপরে সদর কোঠা
আয়নামহল তায়।
কপালের ফ্যার নইলে কি আর
পাখিটির এমন ব্যবহার।
খাঁচা ভেঙ্গে পাখি আমার
কোন বনে পালায়।
মন তুই রইলি খাঁচার আশে
খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে
কোন দিন খাঁচা পড়বে খসে
ফকির লালন কেঁদে কয়।
৮. মানুষ মানুষ সবাই বলে আছে কোন মানুষের বসত কোন দলে--
আছে কোন মানুষের বসত কোন দলে
মানুষ মানুষ সবাই বলে।
অযোনী সহজ সংস্কার
তারা কি সন্ধানে সাধক এবার
বড় গহীণ মানুষ লীলে
ও সে মানুষ লীলে।
ভোজন সাধন নাহি জানি
কোথায় পাই সহজ কোথায় অযোনী
বেড়াই গোলে হরিবোল বলে
ওরে হরিবোল বলে।
তিন মানুষের করণ বিচক্ষন
তারে জানলে হবে এক নিরূপণ
অধীন লালন পরলো গোলেমালে
ওরে মহা গোলমালে।
নিজের মনকে করলাম সোজা
বিবির মনে গোল রইলো
নামাজ আদায় কই হইলো আমার।
সরাসরি শরীয়ত মতে, বিবি যায় না সেই পথে
নিষেধ করলে করে আড়ি, যায় সে মাঠে-ঘাটে
শরীয়ত-মারফত সকল নষ্ট, বিবি আমার করিলো।
বিবি যে বেপর্দা হলে, ধর্ম যায় রে রসাতলে
নামাজ আদায় হয়না, নবীর ফতোয়াই বলে
আহা মরি হায় কি করি, বিবি কি বুঝায় বলো।
সুরা আলিফ লামেবিছে, খোদা নিজেই বলেছে
যার শরীরে মোহর মারা সে বুঝিবে কিসে
সিরাজ সাই কই অবুঝ লালন
নবীর দিনের লোক ভালো।
গেড়ে গাঙ্গেরে ক্ষ্যাপা
হাপুর হুপুর ডুব পাড়িলে
এবার মজা যাবে বোঝা
কার্তিকের উলানির কালে।
বাইচালা দেয় ঘড়ি ঘড়ি
ডুব পারিস কেন তাড়াতাড়ি
প্রবল হবে কফের নাড়ি
তাইতে জীবন হানীমূলে।
কুতবি যখন কফের জ্বালায়
তাগা তাবিজ বাঁধবি গলায়।
তাতে কি রোগ হবে ভালাই
মস্তকের জল শুষ্ক হলে।
শান্ত হরে ও মনভোলা
ছেড়ে দে ঝাঁপই খেলা
এখনো আছে বেলা
লালন কয় দেখ চক্ষু মেলে
১১. মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষে সনে---
মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষেরও সনে।
চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছে কালো শশী
হব বলে চরণদাসী
ও তা হয় না কপাল গুণে।
মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পায় অন্বেষণ
কালারে হারায়ে যেমন
ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে।
ঐ রূপ যখন স্মরণ হয়
থাকে না লোকলজ্জারও ভয়
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
ও প্রেম যে করে সে জানে।
১২. কি ফুল ফুটেছে প্রেমের ঘাটে অপার মহিমা তার ফুলের বটে---
অপার মহিমা তাঁর ফুলে বটে
কি ফুল ফুটেছে প্রেমের ঘাটে।
যাতে জগতের গঠন
সে ফুলের হল না যতন
বারে বারে তাই তে ভ্রমণ
ভবের হাটে।
মাস অন্তে ফোটে সে ফুল
কোথায় রে মূল
জানিনে তাহার ঐ উল
ঘোর যায় ছুটে।
গুরু-কৃপা যার হইলো
ফুলের মূল সেই চিনিল
লালন আজ ফ্যাড়ে পরলো
ভক্তির চোটে।
১৩. ও যার আপন খবর আপনার হয় না----
ও যার আপন খবর আপনার হয় না
একবার আপনারে চিনতে পারলে রে
যাবে অচেনারে চেনা।
নিকট থেকে দুরে দেখায়
যেমন কেশের আড়ে পাহাড় লুকায় দেখ না।
আমি ঘুরে এলাম সারা জগৎ রে
তবু মনের গোলতো যায় না।
আত্মা রূপে কর্তা হরি
সাধন করলে মিলবে তার ঠিকানা
তুই পড়বি যতো বেদ বেদান্ত রে
ও তোর বেড়ে যাবে লখনা।
অমৃত সাগরের সুধা
সুধা খাইলে জীবের ক্ষুধা তৃঞ্চা রয় না
ফকির লালন মরলো জল পিপাসায় রে
কাছে থাকতে নদী দেখনা।
১৪. যে পথে সাঁই চলে ফেরে তার খবর কে করে---
যে পথে সাঁই চলে ফেরে
তার খবর কে করে
সে পথে আছে সদায়, ভীষণ কালনাগিনীর ভয়
যদি কেউ আজগুবী যায়, অমনি উঠে ছোঁ মারে
পলক ভরে বিষ ধেয়ে তার
ওঠে ব্রহ্মার অন্দরে
যে জানে উল্টো মন্ত্র, খাটিয়ে সেহি তন্ত্র
গুরুরূপ করে লক্ষ বিষ ধরে ভোজন করে;
দেখে তার করণ রীতি সাঁই দরদী
দরশন দেবে তারে
সেহি যে অধর ধরা, যদি কেউ চাহে তারা
চৈতন্য গুণীন যারা, গুণ শেখে তাদের দ্বারে
সামান্যে কী পারবি যেতে
সেই কুকপের ভিতরে
ভয় পেয়ে জন্মাবধি, সে পথে না যাও যদি
হবে না ভজন সাধনসিদ্ধি তাও শুনে মন ঝরে
লালন বলে যা করেন সাঁই
থাকিতে হয় সেই পথ ধরে ।
১৫. সব সৃষ্টি করলো যে জন তারে সৃষ্টি কে করছে---
সৃষ্টিকর্তা বলছো যারে
লা-শরিক হয় কেমন করে
ভেবে দেখ পুর্বাপর
সৃষ্টি করলেই শরিক আছে।
সব সৃষ্টি করলো যে জন
তারে সৃষ্টি কে করেছে ৷
সৃষ্টি ছাড়া কি রূপে সে
সৃষ্টিকর্তা নাম ধরেছে ।
চন্দ্র সূর্য যে গঠেছে
তার খবর কে করেছে
নীরেতে নিরঞ্জন আছে
নীরের জন্ম কে দিয়েছে।
স্বরূপ শক্তি হয় যে জনা
কে জানে তার ঠিক ঠিকানা
জাহের বাতেন যে জানেনা
তার মনেতে প্যাঁচ পড়েছে।
আপনার শক্তির জোরে
নিজ শক্তির রূপ প্রকাশ করে
সিরাজ সাঁই কয় ল
নিতান্তই ভূতে পেয়েছে।
১৬. কবে সাধুর চরন ধূলি মোর লাগবে গাঁয়--
কবে সাধুর চরন ধুলি মোর লাগবে গায়
আমি বসে আছি আশাসিন্ধু হয়ে সদাই।
চাতক যেমন মেঘের জল বিনে
অহর্নিশি চেয়ে থাকে মেঘ ধোয়ানে
ও সে তৃষ্ণায় মৃত্যুর গতি জীবনে হোল
সে দশা আমার।
ভজন সাধন আমাতে নাই
কেবল মহৎ নামেএ দেই গো দোহাই
তোমার নামের মহিমা জানাও গো সাঁই
পাপী হও সদয়
শুনেছি সাধুর করুনা
সাধুর চরণ পরশিলে হয়গো সোনা
বুঝি আমার ভাগ্যে তাও হোলনা ফকির
লালন কেঁদে কয়।
১৭. মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি---
মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।
মানুষে মানুষ গাথা
দেখতে যেমন আলেকলতা
জেনে শুনে মুড়াও মাথা
জাতে উঠবি।
দ্বিদলের মৃনালে
সোনার মানুষ উজলে
মানুষ গুরুর কৃপা হলে
জানতে পাবি।
মানুষ ছাড়া মন আমার
দেখবি রে সব শূন্যকার
লালন বলে মানুষ আকার
ভজলে তরবি।
১৮. এসে মদিনায় তরিক জানায় এ সংসারে কে তাহারে চিনতে পারে--
এসে মদীনায় তরিক জানাই
তরিক জানায় এ সংসারে
ভবে কে তাহারে চিনতে পারে।
সবাই বলে নবী নবী
নবী কে নিরঞ্জন ভাবি
দেল ঘুরিলে জানতে পাবি
আহম্মদ নাম হলো কারে।
যার মর্ম সে না যদি কয়
সাধ্য কার কে জানিতে পাই
তাইতে আমার দীন দয়াময়
মানুষরূপে ঘোরে ফেরে।
নফী এজবাত যে জানে না
মিছে রে তার পড়াশুনা
লালন কয় ভেদ উপাসনা
না জেনে চটকে মারে।
১৯. রাঙা চরণ যেন ভুলিনে ও রাঙা চরণ, গুরু সুভাব দেও আমার মনে---
ও রাঙ্গা চরণ যেন ভুলিরন
চরণ যেনো ভুলিনি
সুভা দাও আমার মনে
ও গুরু সুভাব দাও আমার মনে।
তুমি নির্দয় যার প্রতি
ও তার সদাই ঘটে কুমতি
তুমি মনরথের সারথি
যথা লও যাই সেখানে গুরু।
তুমি তন্ত্রের তন্ত্রতরী
গুরু তুমি মন্ত্রের মনতরী
গুরু তুমি যন্ত্রের যন্ত্রতরী
না বাজাও বাজবে কেনে গুরু।
আমার জন্ম অন্ধ মন নয়ন
গুরু তুমি বৈদ্য সব চেতন
অতি বিনয় করে কয় লালন
জ্ঞান অঞ্জন দাও মোর নয়নে।
--- বাউল পানকৌড়ি -- ০৬-১২-২০২৪
প্রিয় সাধক সাধু গুরু রব ফকিরের হাসি মাখা মুখটা ছিলমনের গহীনের শেকড়ে একটা আলো এখন দূড় আকাশের তারা হয়ে। দোতারায় ভর করে হয়তো ঘুরে বেড়াছেন আকাশগঙ্গার পুরোটা পথ আনন্দ নিয়ে। সবোর্চ্চ প্রাথর্নার অংশ থেকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা, দেখা হবে গুরু আমিও যখন আসবো না ফেরার দেশে। কথা হবে তখন সত্য চিরন্তন পথ ঈশ্বরের বন্ধন নিয়ে, আলোকলতা আর মানুষের স্বরুপ নিয়ে।শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সাধু গুরু রব ফকিরের অমৃত বানী আর অপার্থিব কন্ঠের এ গান সবার জন্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন