ঢাকার মুঘল শাহী ঈদগাহ
ঢাকায় মুঘল সময়ে নির্মিত শাহী এই ঈদগাহটি ধানমন্ডির পুরোনো ১৫ এবং নতুন ৮/এ সড়কে সাত মসজিদ রোডের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। জিগাতলা থেকে মোহাম্মদপুরের দিকে যেতে চোখে পড়বে বুড়ো নিমগাছ, তেঁতুলগাছ উত্তর দিকের প্রাচীর বরাবর কয়েকটি মেহগনিগাছ নারকেলগাছ পশ্চিমের দেয়ালের ভেতরের মাঠ সবুজ ঘাসে ঢাকা ৩৮৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহটি। বর্তমানে ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ নামে পরিচিত।
প্রাচীন ঢাকার অতি পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী একটি ধর্মীয় নিদর্শন হলো ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ মাঠ। নির্মাণ করেন মীর আবুল কাসেম ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে। ওই সময় বাংলার সুবাদার ছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা। এই আবুল কাসেমই ছিলেন তার দেওয়ান। ঢাকায় মোগল আমলের যে স্থাপত্য নিদর্শনগুলো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে তারই অন্যতম হলো এই শাহী ঈদগাহ মাঠ।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত প্রাচীন ঈদগাহ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মোগল স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত এ ঈদগাহ ময়দান দৈর্ঘ্যে ১৪৫ ফিট ও প্রস্থে ১৩৭ ফিট। বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শাসকরা ঈদগাহটি ভূমির ৪ ফুট উঁচুতে নির্মাণ করেন। অবশ্য বর্তমানে ঈদগাহটির অনেক অংশই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
![]() |
১৫ ফিট উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই ময়দানের কেবল পশ্চিম দিকের প্রাচীরটিই মোঘল আমলে নির্মিত। এই ঈদগাহর চার কোণে রয়েছে অষ্টাভুজাকৃতির বুরুজ এবং তিন ধাপের মিম্বর। এ ছাড়া এই ঈদগাহের দেয়ালে মোগল আমলে খোদিত শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় চারশ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে মুঘল স্থাপত্যটি। সে সময় মূল শহর থেকে বাহিরে ছিলো মূল শহর অর্থাৎ পুরান ঢাকায় ছোট ছোট বেশ কয়েকটি সুলতানি ঈদগাহ থাকলেও বড় আকারে কোনো ঈদগাহ ছিল না।
তাই মীর আবুল কাসেম ঈদগাহের জন্য জায়গা খুঁজতে থাকেন এবং ধানমন্ডি এলাকা বেছে নেন। কাজেই মূল নগর থেকে কিছুটা দূরে খোলা জায়গায় এবং সাত মসজিদের কাছে হওয়ায় ধানমন্ডি এলাকাতে ঈদগাহটি নির্মিত হয়। ঢাকার প্রথম পরিকল্পিত ঈদগাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৬৪০ সালে নির্মিত সাত মসজিদ রোডের এই ধানমন্ডি ঈদগাহ। সে সময় ঢাকার মোগল শাসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাই এই ঈদগাহে নামাজ আদায় করতেন। পরে ঈদগাহটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জানা যায় চারদিকে প্রায় ১৫ ফুট উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ঈদগাহটির পশ্চিম দিকের প্রাচীরটিই কেবল মোগল আমলের। ১৯৮৮ সালে প্রত্নতত্ত্বব বিভাগ অন্য তিন দিকের প্রাচীর নির্মাণ করেছেন তা সংস্কারের সময়।
একসময় এর পাশ দিয়ে ছিলো বুড়িগঙ্গা নদী। নৌকায় করে ঈদগাহে আসতেন নদীতে একটি ব্রীজ ছিল। ভূমি থেকে প্রায় ৪/৫ ফুট উচ্চ ঈদহাহ। উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকে ৬ ফুট করে উচ্চ প্রাচীর দ্বারা ঈদগাহের স্থানটি ঘেরা ছিল। দেয়ালগুলো কালক্রমে জীর্ণ ও ধ্বংস হয়ে যায়। ঈদগাহের পশ্চিম দিকে জুড়ে রয়েছে ১৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বৃহদাকার দেয়াল।
এই পশ্চিম দেয়ালের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে খিলানের সাহায্যে নির্মিত সুদৃশ্য মেহরাব। মেহরাবের উভয় পার্শ্বে আছে খাঁজকাটাও ধনুকাকৃতির প্যানেল নকশা। এগুলোর পরে উভয় দিকে রয়েছে তিনটি করে ছোট ও অগভীর মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবের সামনে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব ঈদের নামাজে খোতবা দেন এবং নামাজের নেতৃত্ব দেন। কেন্দ্রীয় মেহরাবের উপর যে শিলালিপি রয়েছে তা থেকে জানা গিয়েছে ঢাকার এই ঐতিহাসিক স্থাপনার নির্মান ইতিহাস।
দুই ঈদে ঈদগাহ কানায় কানায় ভরে যায় তার পাশের পাঁচ তলাবিশিষ্ট মসজিদ নিয়ে অন্তত ১০ হাজার এর বেশি মানুষ একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
--- বাউল পানকৌড়ি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন