আইয়ুব বাচ্চু রূপালি গিটারের এক মিথের নাম

আইয়ুব বাচ্চু নামটাই এক আবেগের ভালবাসার শ্রদ্ধার আর এখন অনেক রাত সেই গানটা শুনছি- এই রুপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাব দূরে বহুদূরে। সবারি চলে যেতে হয় অদেখা ভুবনে এই সত্য জানি তারপরও শৈশব স্কুলের দিন গুলোর প্রিয় গান প্রিয় মিউজিশিয়ান যার গান শুনতে শুনতে কত গুলি বছর পার করে দিচ্ছি সে চলে যেতে পারে অদেখা ভুবনে কিন্তু থাকেন আমাদের মনের আকাশে। হঠাৎ গুনগুন করে উঠি আমি যে কার আমি যে আসলে কার মতো বা জয়ন্ত নামে যাকে আমি চিনি না হয় বাংলা ভাষাবাসি এপার বাংলা ওপার বাংলায় একই পছন্দ এবং প্রথম পছন্দ “চলো বদলে যাই” টাইটেলে সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে। আপনি কি জানেন জগৎ বিখ্যাত গানটির কথা সুর ও সঙ্গিত স্বয়ং আইয়ুব বাচ্চুর।  


কিংবদন্তি ব্যান্ড মিউজিশিয়ান গিটারিস্ট গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। কে জানতো এই ছেলেটিই একদিন হবে বিশ্বের অন্যতম সেরা গিটারিস্টদের মধ্যে একজন ( যদি র‌্যাংকিং করা যেতো) এশিয়ার শ্রেষ্ঠ গিটারিস্ট হবে। ১১ বছর বয়সে বাবার কাছে জীবনের প্রথম গিটার উপহার পেয়েছিলেন। সেই দিন থেকেই শুরু তাঁর গিটারের প্রতি মুগ্ধতা ভালবাসা প্রেম আর যা কিছু বলা যায়। সংগীত জীবন শুরু: ১৯৭৭ সালে দিকে এবং ১৯৭৮ সালে যোগ দেন প্রথম কোন ব্যান্ডে সেই ব্যান্ডের নাম ফিলিংস। তার কয়েক বছর পর ফিলিংস ছেড়ে চলে আসেন সোলস ব্যান্ডে থাকেন প্রায় এক দশক। ১৯৯১ সালে বাংলা ব্যান্ড বা মিউজিক জগতে ধ্রবতারা হয়ে আর্বিভূত হোন এলআরবি ব্যান্ড নিয়ে। সেই থেকে ধ্রবতারা হয়ে আছেন কারো সাধ্য নাই এই তারার স্থান দখল করে নেবার ।


ব্যান্ড এলআরবি মাধ্যমে যত সৃষ্টি---
ব্যান্ড গঠন করে সৃষ্টি করেন ইতিহাস ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডাবল অ্যালবাম প্রকাশ করে ফেলেন “এলআরবি ১ এবং এলআরবি ২” নামে এবং ১৯৯৮ সালে “আমাদের বিস্ময়” নামে প্রকাশ করেন আরেকটি ডাবল এ্যালবাম।  

এলআরবি ১ ছিলো--- ঘুম ভাঙ্গা শহরে, প্রভু, ঢাকার সন্ধ্যা, শেষ চিঠি, তুমি ছিলে, মাধবী, সবাই চলে যায়, ধীরে ধীরে, ফেরারী মন, কেন তুমি--  দশটি গান।

এলআরবি ২ ছিলো--- হকার, হ্যাপি, আড্ডা, তোমার চিঠি, ‍রিটায়ার্ড ফাদার, পেনশন, স্মৃতি নিয়ে, এমনটি হলে, শেষ রাতের ডাক্তার, মা, জীবন মানে, এক কাপ চা-- নামে বারটি চমৎকার গান মিউজিক আর লিরিক্স। সালটা ছিলো ১৯৯২ মনে রাখতে হবে।
তারপর আর থেমে থাকেননি সৃষ্টি করেছেন আর আমাদের উপহার দিয়ে গিয়েছেন চমৎকার কালজয়ী এ্যালবাম-সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারী মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২) ।

একক আইয়ুব বাচ্চুর সৃষ্টি----
এই তো গেলো তাঁর ব্যান্ড এ্যালবামের কথা আর উনার একক এ্যালবাম “কস্ট” সেতো ছিলো বাংলাদেশে মিউজিকের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ বিস্ফোরন। একক শিল্পী হয়ে প্রথম এ্যালবাম প্রকাশ করেন ১৯৮৬ সালে “রক্ত গোলাপ” নামে তারপরই একে একে জন্ম আর আমাদের জন্য উপহান দিয়ে গিয়েছেন--ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬),জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এছাড়াও মিক্সড এ্যালবাম ও অন্যান্য মিডিয়াতে ছিলো তার অসাধারন সব গান আর মিউজিক।


গিটার মিথ এবং আইয়ুব বাচ্চু----

আইয়ুব বাচ্চু গিটার প্রীতির কথা দেশে সবার কম বেশি জানা। ফেন্ডার স্টাটোকাস্টার’, আইভানেজের জেম সেভেনটি সেভেন সহ ৫০টির ও বেশি গিটার ছিলো তাঁর সংগ্রহে ছিলো। এত গিটার যার সংগ্রহে ছিলো তারমধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিলো সাদা ও কালো রঙের দুটি ফেন্ডার স্টাটোকাস্টার গিটার। এলআবরির প্রথম ও ডাবল অ্যালবাম এলআরবি ১ ও এলআরবি ২-এর সব গান এবং সুখ এ্যালবামের প্রতিটি গানে সঙ্গি ছিলো এই দুই গিটার। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জন পেট্রুচি মডেলের জেপিএম নাইনটি এইচএএম লিমিটেড এডিশন গিটারটির একটা সংগ্রহে ছিলো আইয়ুব বাচ্চুর কাছে। নিজেকে বলতেন ভাড়াখাটা গিটারের ভাড়াখাটা প্রেমিক। গিটার নিয়ে তাঁর যে কস্টটা ছিলো তাঁর বাবা কিনে দেওয়া সেই প্রথম গিটারটা হারিয়ে ফেলেন তিনি।

যে গিটারে দেশ অপমানিত হয়, তা দ্বিতীয়বার বাজাই না এক কথা আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন নিউইয়র্কের গিটার শো রুমের ম্যানেজারকে। এলআরবির প্রথম যুক্তরাষ্ট সফরের সময়। ৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো এলআরবি শো করতে যায়। শো শেষে ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের নিয়ে আইয়ুব বাচ্চু যান নিউইয়র্কের গিটার সেন্টারে। আইয়ুব বাচ্চু সেখানে সামনে থাকা গিটারগুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন। হঠাৎ আইভানেজ গিটারের ওপর চোখ পড়ে তাঁর। কাচের বাক্সে বন্দী। দোকানের ব্যবস্থাপককে এই গিটারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই লোকটি আইয়ুব বাচ্চুর দিকে ভালো করে তাকান। জানতে চান, কোন দেশ থেকে এসেছ? এরপর বললেন, এই গিটার তোমার মতো বাংলাদেশির জন্য নয়। এটা এখানে সবচেয়ে দামি গিটার, তুমি বরং অন্যটা দেখ। লোকটির কথায় আইয়ুব বাচ্চু কষ্ট পান। বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন দেশটাকে অপমান করা হয়েছে, তাই ভেবে। আইয়ুব বাচ্চুর মনে জেদ চাপে। তিনি সেই ব্যবস্থাপককে অনুরোধ করেন, ‘গিটারটি একবার দেখার সুযোগ দাও। আমার আর টিমের সবার কাছে যত ডলার আছে, আশা করি এটা নিতে পারব।’ লোকটি অনিচ্ছাসত্ত্বেও গিটারটা দেখতে দেন আইয়ুব বাচ্চুকে। গিটার হাতে পেয়ে আইয়ুব বাচ্চু বাজানো শুরু করেন। এমনভাবে বাজালেন, আশপাশে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। আইয়ুব বাচ্চুর বাজানো দেখে সবাই অবাক। এরপর গিটার ফেরত দিতে গেলে লোকটি আইয়ুব বাচ্চুকে বললেন, ‘তুমি অসাধারণ বাজাও, এই গিটার তোমার জন্যই। এটা আমি তোমাকে অর্ধেক দামে দেব।’ আইয়ুব বাচ্চু বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘এটা তুমি আমাকে বিনে পয়সায় দিলেও আমি নেব না, তুমি আমার দেশকে অপমান করেছ। যে গিটারের জন্য দেশ অপমানিত হয়, সেই গিটার আইয়ুব বাচ্চু দ্বিতীয়বার বাজায় না।

আজ ১৬ আগস্ট বাচ্চু ভাইয়ের ৬২তম জন্মদিনের দিন। জন্মদিনের তাঁর প্রতি আমার আমাদের সকলের শুভেচ্ছা এবং প্রার্থনা অন্য ভুবনে ভাল থাকেন প্রভু আপনাকে সুখে রাখুক। শ্রদ্ধা আর ভালবাসা আপনার জন্য।


বন্ধুরে তুই মা’কে বলিস
কথা- লতিফুল ইসলাম শিবলী
এ্যালবাম- তবুও


জয়ন্ত নামে জাকে আমি চিনি
কথা- লতিফুল ইসলাম শিবলী
এ্যালবাম- স্কুপ ড্রাইভার


মাধবী (চোখে সানগ্লাশ মুখে হাসি)
কথা- আইয়ূব বাচ্চু
এ্যালবাম- এলআরবি ভলিউম-১


হাসপাতাল (অসুস্থ আমি এক হাসপাতালে)
কথা- 
এ্যালবাম- সুখ


কি আশাতে ( মেঘলা আশা নিয়ে এসোছো তুমি কে)
কথা- 
এ্যালবাম- সুখ


আমি যে কার আমি যে আসলে কার মত
কথা- 
এ্যালবাম- সুখ


ক্ষনিকের জন্য (ক্ষনিকের সব ক্ষনিকের জন্য)
কথা- 
এ্যালবাম- সুখ


হাসতে দেখো গাইতে দেখো
কথা- 
এ্যালবাম- ক্যাপসুল ৫০০ মিগ্রা


নীল বেদনা (রাত ঘুম নেই আমার চোখে)
কথা- 
এ্যালবাম- ক্যাপসুল ৫০০ মিগ্রা


মাগো ভাবনা কেনো (আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে)
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান
কথা- 
লাইভ কনসার্ট










------ বাউল পানকৌড়ি.... 16.08.2024









মন্তব্যসমূহ