বঙ্গবন্ধু পদ্মা মেঘনা যমুনায় আর কবিতায়
যত দিন বাংলাদেশ থাকবে তত দিনই উচ্চারিত হবে নাম শেখ মুজিবুর রহমান। এই মহান মানুষটা আছে আমাদের সম্মান শ্রদ্ধার সবোর্চ্চ স্থানে। সব ছবি ভাস্কর্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া যাবে মনের গভীরের স্থান থেকে মুছে ফেলা যাবে না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাঁর অবদান স্মরন করবে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে।
কবি অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত " জয় মুজিবুর রহমান " কবিতার সেই বিখ্যাত চরণ
“যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরি যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান "
কবি নির্মলেন্দু গুণের সেই কবিতাটা--“ আগস্ট শোকের মাস, কাঁদো” - কাঁদো বাঙালি কাঁদো..
এসেছে কান্নার দিন, কাঁদো বাঙালি, কাঁদো।
জানি, দীর্ঘদিন কান্নার অধিকারহীন ছিলে তুমি,
হে ভাগ্যহত বাংলার মানুষ, আমি জানি,
একুশ বছর তুমি কাঁদতে পারোনি। আজ কাঁদো।
আজ প্রাণ ভরে কাঁদো, এসেছে কান্নার দিন,
দীর্ঘ দুই-দশকের জমানো শোকের ঋণ
আজ শোধ করো অনন্ত ক্রন্দনে।
.
তোমার বক্ষমুক্ত ক্রন্দনের আবেগী উচ্ছ্বাসে
আজ ভেসে যাক, ডুবে যাক এই বঙ্গীয় বদ্বীপ।
মানুষের ত্রকত্রিত কান্না কতো সুন্দর হতে পারে,
মানুষ জানে না। এবার জানাও। সবাই জানুক।
মাটি থেকে উঠে আসা ঝিঁঝির কান্নার মতো
তোমাদের কল্লোলিত ক্রন্দনের ধ্বনি শুনুক পৃথিবী।
কাঁদো, তুমি পৃথিবী কাঁপিয়ে কাঁদো আজ।
.
কান্নার আনন্দবঞ্চিত, হে দুর্ভাগা দেশের মানুষ,
তুমি দুধ না-পাওয়া ক্ষুধার্ত শিশুর মতো কাঁদো,
তুমি ভাই-হারানো নিঃসঙ্গ বোনের মতো কাঁদো,
তুমি পিতা-হারানো আদুরে কন্যার মতো কাঁদো,
তুমি জলোচ্ছ্বাসে নিঃস্ব মানুষের মতো কাঁদো,
তুমি সদ্যপ্রসূত মৃত-সন্তানের জননীর মতো কাঁদো,
যুবক পুত্রকে কবরে শুইয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে আসা
বৃদ্ধ পিতার মতো তুমি উঠানে লুটিয়ে পড়ে কাঁদো।
যখন কাঁদতে চেয়েছিলে তখন কাঁদতে না-পারার
অসহায় ক্ষোভে, বেদনায় তুমি অক্ষমক্রোধে কাঁদো।
.
একুশ বছর পরে আজ মেঘ ফুঁড়ে উঠেছে মুজিবসূর্য
বাংলার আকাশে; উল্লাসে নয়, কান্নার মঙ্গলধ্বনিতে
আজ আবাহন করো তারে। কাঁদো, বাঙালি, কাঁদো।
এসেছে কান্নার দিন মুজিববিহীন এই স্বাধীন বাংলায়।
.
আজ উৎপাটিত বটপত্রের শুভ্র-কষের মতো
চোখ বেয়ে ঝরুক তোমার অশ্র“বিন্দুরাশি।
আজ কাটা-খেজুর গাছের উষ্ণ রসের মতো
বুকের জমানো কান্না ঝরুক মাঠির কলসে।
একুশ বছর পর, আজ এসেছে আগস্ট।

কবি সিকান্দার আবু জাফর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সংবাদে রচনা করেন “ফিরে আসছে শেখ মুজিব.....
মুক্তিকামী মানুষের শুভেচ্ছার পথে
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক
শেখ মুজিবুর রহমান
ফিরে আসছেন বাংলাদেশে।
ফিরে আসবেন জানা ছিল,
জানা ছিল ব্যর্থ হতে পারে না কখনো
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কণ্ঠে
সমস্বর বিশ্বের জাগ্রত গণদাবি ছিল।
মানুষে অমানুষ সংঘর্ষের প্রস্তরফলক পেরিয়ে
ফিরে আসছেন তিনি ইতিহাসে অসনাক্ত পথে।
পেরিয়ে আসছেন সশস্ত্রের-ঝরা
নিরস্ত্র রক্তের নদী,
কোটি কোটি দীর্ঘশ্বাসের ঝড়-সওয়ার
তিনি আসছেন বঙ্গবন্ধু বিজয়ী মুজিব,
পায়ে পায়ে বেজে উঠছে ইতস্তত করোটি কঙ্কালের
প্রতিজ্ঞার জয়ধ্বনি
ফিরে আসছেন বধূ-ভগ্নী-জননীর
লুণ্ঠিত নারীত্বের আর্তনাদ পেরিয়ে
অগ্নিদগ্ধ গ্রাম কুঠিরের অগণিত
সংসার-ভস্মের অভ্যর্থনা ছুঁয়ে
বাঙালির শতচূর্ণ স্নেহপ্রীতি মমতা প্রেমের
সমাধি সঙ্কুল রাজপথে।
মানবিক চেতনার শ্মশান শৃগাল
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কান্নায় পাথরে গড়া
সুমসৃণ পথে ফিরে আসছেন তিনি।
ফিরে আসছেন বঙ্গ ভারতের
সম্মিলিত রক্তস্নাত মহাপুণ্য পথে
বাংলাদেশের মরণ বিজয়ী মুক্তি সেনানী।
ছাত্র জনতার
করতালি মুখরিত পথে
ফিরে আসছেন তিনি জাতির জনক
সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে
নির্ভর ভবিষ্যতের স্বপ্নদীপ্ত
নিরঙ্কুশ প্রত্যাশার পথে।......

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত কবিতা রচিত হয়েছে অপর কাউকে নিয়ে তত কবিতা রচিত হয়নি। একজন মানুষ জীবদ্দশায় বা পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার পর তখনই কবিতার বিষয় হয়ে ওঠেন যখন তিনি একটি প্রতীক, রূপক, কিংবদন্তি, পুরাণ বা প্রকৃতির অংশ হয়ে পড়েন। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সেই বিখ্যাত উক্তি- “আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম”।
আজ ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতের তাঁর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
----- বাউল পানকৌড়ি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন